ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বর্ষবরণ ঘিরে পর্যটকে ঠাসা কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

এবার কক্সবাজারের আকাশে দেখা মেলেনি ২০১৭ সালের শেষ সূর্য। বৈরী আবহাওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ ঘিরে সমুদ্রসৈকতে ছিল না কোনো আয়োজন। তবু কমতি নেই পর্যটকের। হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউসসহ সর্বত্র পর্যটকে ঠাঁসা।

ইংরেজি বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ে অন্য বছরের মতো এবার কক্সবাজার সৈকতে দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের গান নেই। জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের গিটারে বাজেনি সুর। বিশাল মঞ্চে দেখা মেলেনি কোনো দেশের তারকাশিল্পী। আলোকিত হয়নি সমুদ্রসৈকত। রাত ১২টা পর্যন্ত গানের তালে তালে নাচার কোনো সুযোগও ছিল না। রবিবার দীর্ঘদিনের চিত্র পাল্টে গিয়ে নীরবেই সৈকতে বসে হাজারো মানুষের মিলনমেলা।

গতকাল রবিবার ছিল ২০১৭ সালের বিদায়ের দিন। পুরোদিন মেঘে ঢাকা আকাশ। সূর্যের দেখা মেলেনি। বিকেল থেকেই পর্যটকের স্রোত নামে সৈকতমুখী। কিন্তু সন্ধ্যার পর পাল্টে যায় আবহাওয়া। আকাশ ভেঙে নেমে আসে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এমন বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও পর্যটকরা অনাবিল আনন্দ আর উৎসাহ-উদ্দীপনায় পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে ভিড় করেন সৈকতে। মন রাঙিয়ে ইংরেজি বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ করেছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের সেবায় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করতে মাঠে রয়েছেন। পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে গতবারের মতো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’

নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত শরিফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী তসলিমা ইসলাম বলেন, এবার উন্মুক্ত মঞ্চে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এতে কোনো আক্ষেপ নেই। নাচ-গান দেখার জন্য এখানে আসা হয়নি। প্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দরের টানে কক্সবাজারে আসা।

এদিকে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ইনানী আর কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছেন তিন লক্ষাধিক পর্যটক। পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার। গেল কয়েকদিনে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা। ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড়দিনের ছুটি, শীতকালীন অবকাশ, ইংরেজি বর্ষকে বিদায়-বরণসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটি উপভোগ করতে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন তাঁরা। অনেকে হোটেলে রুম না পেয়ে উঠেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এমন ব্যবসা পুরো জানুয়ারি জুড়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটনব্যবসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজারের হোটেল মোটেল গেস্টহাউস এবং তারকা মানের আবাসিক হোটেলগুলো আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, শীতকালীন অবকাশ, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, খ্রিস্টধর্মের বড়দিনের ছুটি এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে পর্যটকে টইটমু্বর কক্সবাজার। তাঁর তিনটি আবাসিক হোটেলই আগাম ভাড়া হয়ে গেছে।

হোটেল সি কক্সের মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ডিসেম্বরজুড়ে আমার হোটেল পর্যটকে পরিপূর্ণ। ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। ’

সাগরপাড়ের তারকা মানের হোটেল সি গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী রুমি বলেন, ‘আমাদের হোটেলের সব কক্ষ অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে। বিশেষ করে তিন জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো কক্ষ খালি নেই। পর্যটকদের আকর্ষণে ইতোমধ্যে হোটেলকে নানাভাবে সাজানো হয়েছে। ইনডোরে নানা অনুষ্ঠান থাকছে পর্যটকদের জন্য। ’

পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই পর্যটক টানতে বিভিন্ন স্পট নিজ উদ্যোগে সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কলাতলী সৈকতের তারকা মানের হোটেল সায়মান বিচ রিসোর্টের অর্থ ও হিসাব ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান নুর জানিয়েছেন, এবারে এক ভিন্ন রকম স্বাদে থার্টিফার্স্ট উদযাপিত হচ্ছে।

বিলাসবহুল হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ব্যবস্থাপক সেলিম সাদেক, হোটেল সি ক্রাউনের ব্যবস্থাপক এ বি এম ইকবাল মহসীন ও হোটেল হোয়াইট অর্কিডের ব্যবস্থাপক মো. রিয়াদ ইফতেখার জানান, নতুন বছর উপলক্ষে হোটেলগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. রায়হান কাজেমী বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ’

এদিকে কক্সবাজারের পর্যটনস্পট সমুদ্রসৈকত, ইনানী, সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, সোনাদিয়া, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গুদুম গুহা, রামুর রামকোট, ১০০ ফুট দীর্ঘ সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি দেখতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। বার্মিজ মার্কেট, কলাতলীর শুঁটকির দোকান, বাজারঘাটার বিভিন্ন মার্কেটে বেড়েছে বিকিকিনি। গভীর রাত অবধি চোখে পড়ছে পর্যটকদের বিচরণ।

পাঠকের মতামত: